পাঁচগাঁও, নেত্রকোণা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক পাহাড়ি গ্রাম
পাঁচগাঁও, নেত্রকোণা বাংলাদেশের একটি সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম। চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়, ঝর্ণা এবং স্থানীয় ঐতিহ্য একে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে।
পাহাড়কন্যা বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দেশ এমনকি বিদেশি পর্যটকরাও ছুটে আসে। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের মনের প্রায় সকল চাহিদা মিটে যায় এই জেলায় ভ্রমণের ফলে। কারণ, পাহাড়ি রূপ উপভোগ করার জন্য বান্দরবান নিঃসন্দেহে সেরা জায়গা।
মেঘ পাহাড়ের দেশ নামে পরিচিত জেলার নাম হচ্ছে বান্দরবান।বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব দিকে ৪৪৭৯ বর্গকিলোমিটার জুড়ে পাহাড়ের এই রাজ্যের অবস্থান। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে কক্সবাজার, উত্তর-পশ্চিমে চট্টগ্রাম, পূর্বে মায়ানমার ও উত্তরে রাঙামাটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বান্দরবানের উচ্চতা প্রায় ৭৮ ফুট। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। পাহাড়, ঝর্ণা ও নদীর মিলনমেলা পুরো বান্দরবান জুড়ে।
পাহাড়কন্যা বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দেশ এমনকি বিদেশি পর্যটকরাও ছুটে আসে। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের মনের প্রায় সকল চাহিদা মিটে যায় এই জেলায় ভ্রমণের ফলে। কারণ, পাহাড়ি রূপ উপভোগ করার জন্য বান্দরবান নিঃসন্দেহে সেরা জায়গা। যারা পাহাড়ে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য নৈসর্গিক বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Table of contents [Show]
সবুজ পাহাড়ের মাঝে মেঘের লুকোচুরি নীলগিরিকে করেছে অন্যন্য। বান্দরবান জেলারসদর থেকে নীলগিরি পাহাড় প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২২০০ ফুট। অপরূপ সুন্দর এই নীলগিরিকে অনেকেই বলে বাংলার দার্জিলিং। যাদের আকাশ ছোঁয়ার অনেক ইচ্ছে, তাদের ইচ্ছে পূরণে নীলগিরি অধীর আগ্রহ বসে আছে। সুউচ্চ পাহাড়ের নান্দনিক দৃশ্য দেখে আপনি প্রকৃতির মায়ায় পড়ে যাবেন। হারিয়ে যাবেন মেঘের রাজ্যে। আপনার মনে হবে কল্পনা আসলে সব বাস্তব।
নীলগিরি পাহাড়ের চূড়ায় উঠা মাত্রাই আপনার চোখে পড়বে শুভ্র সাদা মেঘের সারি। খুব কাছ থেকেই মেঘের এই আনাগোনা আপনাকে বিমোহিত করবে নিঃসন্দেহে। নীলগিরিতে রয়েছে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, ফলে নিরাপত্তা নিয়ে আপনার কোনো চিন্তা করতে হবে না। পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনায়াসেই ঘুরে আসতে পারবেন নীলগিরিতে।
মারায়ন তাং পাহাড় বান্দরবানের আলীকদম থানার মিরিঞ্জা রেঞ্জে অবস্থিত। এই পাহাড় মেরাই থং জাদি, মারায়ং তং, মারাইডং সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। এই পাহাড়ের ১৬৪০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। পাহাড়ের নিচে আঁকাবাঁকা মাতামুহুরি নদী, সবুজ ফসলের ক্ষেত মারায়ন তাং পাহাড়কে করে তুলেছে কাল্পনিক রাজ্য। বান্দরবান ভ্রমণে গেলে মারায়ন তাং পাহাড়ে যেতে ভুল করবেন না।
এখানে মারমা, মুরং ও ত্রিপুরা সহ বেশকিছু আদিবাসীদের বসবাস লক্ষ করা যায়। পাহাড়ের ভাঁজে থাকা আদিবাসীদের জন্যই পাহাড়টি এতো বৈচিত্র্যময়। পাহাড়িদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন আপনাকে দিবে ভিন্ন এক অনুভূতি।
অসাধারণ এসব দৃশ্য উপভোগ করার জন্য হলেও মারায়ন তাং পাহাড়ে ভ্রমণ করুন।
বান্দরবান জেলার খানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে নাফাখুম জলপ্রপাত অবস্থিত। এই জলপ্রপাতকে অনেকেই বাংলার নায়াগ্রা বলে অভিহিত করেন। পানি প্রবাহের পরিমাণের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত। বান্দরবানের গহীনে, রেমাক্রি থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে নাফাখুম জলপ্রপাতের অবস্থান। রেমাক্রি থেকে আনুমানিক ৩ ঘণ্টা হাঁটার পর অনিন্দ্য এই রহস্যের দেখা মিলে। এখানে এসে আপনি পানির অপরূপ নৃত্য দেখতে পাবেন। দ্রুত গতিতে পানি নামার কারণে, জলীয় বাষ্পে সূর্যের আলোয় এখানে প্রতিনিয়ত রংধনু খেলা করে।
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের কাছে নাফাকুম জলপ্রপাত এককথায় অসাধারণ লাগবে। কারণ, এখানে সাঙ্গু নদীর ভয়ংকর রূপ, আদিবাসীদের জীবনচিত্র ও পাথুরে জলের খেলা অ্যাডভেঞ্চারদের ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ করবে। এখানে ট্রেকিং করতে একটু কষ্ট হলেও নাফাকুম পৌঁছানো মাত্রই সকল কষ্ট ধূসর হয়ে যাবে।
বান্দরবান জেলার সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরেই চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড়ের উচ্চতা ২৫০০ ফুট। পাহাড়ে ওঠার জন্য রয়েছে সাপের মতো আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তার প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনার দেহ ও মনকে দিবে প্রশান্তি। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক রূপের অরণ্যে আপনি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবেন। চিম্বুক পাহাড়ের সৌন্দর্য আপনাকে তার প্রেমে ফেলতে বাধ্য করবে। অবলীলায় আপনি সবুজে মোড়ানো ঘাসের সাথে মিশে যাবেন। অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করতে পারবেন।
বর্ষাকালে চিম্বুক পাহাড় থেকে সাজেকের মতো মেঘের আসা-যাওয়া দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো হলে হাত বাড়িয়ে মেঘের ছোঁয়াও পেতে পারেন। নীলগিরি যাওয়ার পথেই চিম্বুক পাহাড়ের দেখা মিলে। তাই নীলগিরি গেলে চিম্বুক পাহাড়ে যেতে ভুল করবেন না।
বান্দরবান জেলা থেকে ৬৬ কিলোমিটার দূরে সাঙ্গু নদীর পাড়ে ঋজুক ঝর্ণা অবস্থিত। এই ঝর্ণায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম জলধারা বয়ে চলে। ঋজুক ঝর্ণা থেকে সবচেয়ে বেশি পানি নামে বর্ষাকালে। অঝোরে ঝর্ণার পানির চারপাশের সবুজ মায়াবী প্রকৃতি সত্যিই অসাধারণ। অপরূপ এই ঝর্ণাকে মার্মা ভাষায় বলা হয় রী স্বং স্বং।
ঋজুক ঝর্ণা ছাড়াও এখানের সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্য দেখেও আপনি বিভোর হবেন। কারণ, সাঙ্গু নদীর টলমলে পানির নিচে বালি নুড়িপাথর স্পষ্ট দেখা যায়। সাঙ্গু নদীর বাঁকে বাঁকে দেখতে পাবেন ফসলের জমি। এছাড়াও আদিবাসী জীবনধারা তো দেখতে পাবেনই। সব মিলিয়ে ঋজুক ঝর্ণা ভ্রমণ হবে উপভোগ্য।
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বগালেক অবস্থিত। এটি কেওক্রাডং পাহাড়ের কোল ঘেঁষে প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতায় প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট একটি হৃদ। এটি প্রায় দুই হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। বগালেক বা বগাকাইন লেকের অপর নাম হচ্ছে ড্রাগন লেক। দিনের তিন বেলায় বগালেক ভিন্ন ভিন্ন সাজে সজ্জিত থাকে বলেই এই স্থানে পর্যাটকদের ভিড় বারো মাস লেগেই থাকে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পনেরো একর জায়গায় জুড়ে জলের পসরা, পাহাড় ও মুক্ত আকাশ দর্শনার্থীদের সব ক্লান্তি একসাথে ধূসর করে দেয়।
বর্ষাকালের চেয়ে শীতকালে বগালেক ভ্রমণ করা সুবিধাজনক। তাই শীতকালে এখানে আসার চেষ্টা করুন। আর আপনি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হলে বর্ষাকালেই ভ্রমণ করে বগালেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
আলীর সুড়ঙ্গ বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি এই গুহা বা সুড়ঙ্গ নানান রহস্যে ঘেরা। আলীকদম সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে মাতামুহুরি টোয়াইন খাল ঘেঁষে দুইটি পাহাড়ের অবস্থান। এই দুই পাহাড়ের একটির মধ্যেভাগে আলীর সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ। এখানে মোট তিনটি সুড়ঙ্গ আছে। সবগুলো সুড়ঙ্গ দেখার জন্য দুই ঘণ্টারও অধিক সময় লাগে। সুড়ঙ্গের ভিতর অন্ধকারে আচ্ছন্ন এবং বেশ পিচ্ছিল। তাই টর্চ লাইট নিয়ে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করাই উত্তম।
প্রথম গুহা থেকে দ্বিতীয় গুহায় যেতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো সময় লাগে। সুড়ঙ্গ ভিতরের পথ তেমন ভালো না। তাই সাবধানে চলাচল করবেন। গুহার মাঝে অনেক বাদুড় বসবাস করে, মানুষ দেখলে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করতে পারে। আপনি ভয় পাবেন না। বাদুড়গুলো আপনার কোনো ক্ষতি করবে না।
বান্দরবান জেলার সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত ঝর্ণা অবস্থিত। এই ঝর্ণাকে ঘিরে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সবসময়। এখানে পর্যটকদের কেন্দ্র করে একটি মার্কেট গড়ে উঠেছে। অতিরিক্ত পর্যটকদের ফলে মার্কেটটি জমছেও বেশ। শৈলপ্রপাতের আশেপাশের দোকানগুলোর বেশিরভাগ বিক্রেতাই নারী। এখানে চমৎকার ভিন্ন এক পরিবেশ।
সব মৌসুমের তুলনায় বর্ষাকালে ঝর্ণায় পানি বেশি থাকে। শৈলপ্রপাত ঝর্ণাটি রাস্তার পাশে অবস্থিত হওয়ায় যে-কেউ যেকোনো সময় এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। শান্ত, শীতল, স্বচ্ছ ঝর্ণাটি মন প্রাণ জুড়িয়ে দিতে সক্ষম।
বান্দরবানের আলীকদম ও থানচি উপজেলার মাঝামাঝি জায়গায় ডিম পাহাড় অবস্থিত। থানচি-আলীকদম সড়কটি হচ্ছে ডিম পাহাড়ে যাওয়ার একমাত্র সড়ক। এই সড়কটি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের উঁচু সড়কটি বেশ পছন্দ হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আদিবাসীদের জীবনধারা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।
পাহাড়টির নাম ডিম পাহাড় হলেও এখানে ডিমের কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রায় ২৫০০ ফুট উচ্চতার পাহাড়টি রূপের ঢালা মাথা উঁচু করে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। কষ্ট করে পাহাড়ের চূড়ায় উঠার পর এর সৌন্দর্য দেখে আপনার কষ্ট এক নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে শুধু বাস ছেড়ে যায়। আপনি চাইলে চট্টগ্রামে সরাসরি এসে, সেখান থেকে লোকাল বাসে বান্দরবান যেতে পারবেন। বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়ার জন্য সিএনজি চালিত রিকশা, বাস ও চান্দের গাড়ি পাবেন। এই গাড়িগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সার্ভিস দেয়। বান্দরবানে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাপারে অবশ্যই একজন গাইড নিয়ে যাবেন। গাইডরা আপনার ভ্রমণের যাবতীয় সহযোগিতায় নিযুক্ত থাকবে।
বান্দরবানে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেলে রয়েছে। তবে হোটেলগুলো বেশিই বান্দরবান জেলা সদরে। আপনি সেখানে কম খরচে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তাছাড়াও বান্দরবানের কিছু কিছু দর্শনীয় স্থানে হোটেল আছে। আপনি চাইলে সেখানেও থাকতে পারবেন। বান্দরবানে থাকতে আপনার তেমন অসুবিধা হবে না।
আর বান্দরবানে পাহাড়ি অঞ্চলের খাবার অনেক সুস্বাদু। বান্দরবানে গেলে পাহাড়ি বিভিন্ন রকমের ফল খেতে মিস করবেন না। আর সকাল, দুপুর ও রাতে খাওয়ার জন্য হোটেল তো আছেই। হোটেলে খাবার খাওয়ার আগে খাবারের মান সম্পর্কে জেনে নিন।
পাঁচগাঁও, নেত্রকোণা বাংলাদেশের একটি সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম। চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়, ঝর্ণা এবং স্থানীয় ঐতিহ্য একে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে।
বান্দরবানের লামা উপজেলার দর্শনীয় স্থান, ঘোরাঘুরির খরচ, কিভাবে যাবেন এবং থাকার ব্যবস্থাসহ পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ গাইড।
মিরিঞ্জা ভ্যালি, লামা: পাহাড়, মেঘের খেলা, মাতামুহুরী নদীর সৌন্দর্য ও রোমাঞ্চকর রিসোর্ট অভিজ্ঞতা। বিস্তারিত জানুন এখানে।