• 11 Sep, 2025

আর্মেনিয়ান চার্চ: ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক

আর্মেনিয়ান চার্চ: ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক

ঢাকার পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত আর্মেনিয়ান চার্চ একটি ঐতিহাসিক গির্জা যা ১৭৮১ সালে নির্মিত। এর সাথে যুক্ত রয়েছে আর্মেনীয় ব্যবসায়ীদের বসবাস ও তাদের সাংস্কৃতিক অবদান।

আর্মেনিয়ান চার্চ(Armenian Church) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৭৮১ সালে নির্মিত এই গির্জাটি দেশের অন্যতম প্রাচীন খ্রিস্টান উপাসনালয়। এটি আর্মেনীয় বণিক ও ধর্মযাজকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত, আর্মেনীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রার্থনার জন্যই এই গির্জার সূচনা হয়। তবে এর ইতিহাস আরও গভীরে প্রোথিত, কারণ গির্জার স্থানের সাথে যুক্ত রয়েছে একটি কবরস্থানের কাহিনি।  

প্রাথমিক ইতিহাস এবং নির্মাণ  

১৭৮১ সালে গির্জাটি নির্মাণ করা হলেও, এর আগে এখানেই ছিল একটি ছোট উপাসনালয়। আর্মেনীয়রা ঢাকায় আসার পূর্বে তাদের প্রার্থনার জন্য ব্যবহার করতেন তেজগাঁওয়ে ১৬৭৭ সালে নির্মিত চার্চ অফ দ্য হোলি রোজারিও  

গির্জার জমিটি দান করেছিলেন আগা ক্যাটচিক মিনাস। ঐ সময় গির্জার স্থানটি ছিল মূলত একটি কবরস্থান। মোগল আমলে আর্মেনীয়রা ভাগ্যান্বেষণের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়িক কারণে এদেশে আসতে শুরু করেন। তারা লবণ, পাট, বস্ত্র এবং পানের ব্যবসা করে প্রচুর সমৃদ্ধি অর্জন করেন। ঢাকায় তাদের উপস্থিতি ও প্রভাব এতটাই গভীর হয়েছিল যে, তাদের বসবাসের এলাকাটি পরিচিতি পায় “আরমানিটোলা” নামে।  

স্থাপত্য ও গির্জার বৈশিষ্ট্য  

ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীদ্বারা নির্মিত এই গির্জাটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। প্রধান দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যায় বাঁ পাশে একটি পেঁচানো কাঠের সিঁড়ি যা ছাদ পর্যন্ত উঠে গেছে। চার্চের অভ্যন্তরে পুরুষ এবং নারীদের বসার স্থান আলাদা করা হয়েছে। মূল বেদিতে রয়েছে যিশুখ্রিস্টের চিত্রকর্ম এবং ক্রুশ চিহ্ন।  

চার্চের সাথে সংযুক্ত কবরস্থানে রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক সমাধি। অধিকাংশ সমাধি মার্বেল পাথরের তৈরি এবং প্রতিটি সমাধিতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নকশা। কবরস্থানের বিশেষ আকর্ষণ হল ক্যাটচিক এভিটিক থমাসের সমাধি। এই সমাধির পাশেই রয়েছে শ্বেতপাথরের এক নারীমূর্তি, যা তার স্ত্রী কলকাতা থেকে এনে স্থাপন করেছিলেন।  

আর্মেনীয়দের উপস্থিতি ও অবদান  

১৭১৪ সালে লেজার অফ এরিভানের ছেলে খোজাহ এভিয়েটেস লেজারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঢাকায় আর্মেনীয়দের দীর্ঘ উপস্থিতি নিশ্চিত হয়। তার সমাধিস্থ স্তম্ভে আর্মেনীয় ভাষায় খোদাই করা রয়েছে। এতে প্রমাণ মেলে যে আর্মেনীয়রা ঢাকায় প্রায় ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছে। তাদের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল, যা তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য সুবিধাজনক ছিল। 

শেষ আর্মেনীয়দের গল্প  

চার্চের শেষ সমাধিস্থ ব্যক্তি ছিলেন ভেরোনিকা মার্টিন। তিনি ২০০৫ সালের ৭ মে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্বামী মাইকেল জোসেফ মার্টিন চার্চের দেখাশোনা করতেন ১৯৮৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ২০১৪ সালে ঢাকায় আর্মেনিয়ান বংশোদ্ভূত আর কেউ ছিলেন না। মাইকেল মার্টিন পরে কানাডায় বসবাস শুরু করেন এবং ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।  

ভ্রমণ নির্দেশিকা  

কিভাবে যাবেন:    
ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় পৌঁছানো যায়। গুলিস্থান থেকে রিকশায় সহজেই চার্চে যাওয়া যায়।  

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান:    
আর্মেনিয়ান চার্চের কাছেই রয়েছে সদরঘাট, আহসান মঞ্জিল, বিউটি বোর্ডিং, বাহাদুর শাহ পার্ক, লালবাগ দুর্গ, তারা মসজিদ, এবং শোয়ারী ঘাট। হাতে সময় থাকলে এই জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।