পাঁচগাঁও, নেত্রকোণা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক পাহাড়ি গ্রাম
পাঁচগাঁও, নেত্রকোণা বাংলাদেশের একটি সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম। চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়, ঝর্ণা এবং স্থানীয় ঐতিহ্য একে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে।
অপরূপ প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। পাহাড়ের নান্দনিক সাজ, ঝর্ণা, ঝিরি ঝিরি হাওয়া মাঝে সাদা মেঘ দেখে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে বাধ্য হয় যে-কেউ। তাইতো বছরের বারো মাস সীতাকুণ্ড পর্যটকদের পদচারণায় থাকে মুখরিত।
অপরূপ প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। পাহাড়ের নান্দনিক সাজ, ঝর্ণা, ঝিরি ঝিরি হাওয়া মাঝে সাদা মেঘ দেখে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে বাধ্য হয় যে-কেউ। তাইতো বছরের বারো মাস সীতাকুণ্ড পর্যটকদের পদচারণায় থাকে মুখরিত। সীতাকুণ্ড একেক মৌসুমে একেক সাজে সজ্জিত থাকে বলেই পর্যটকদের কাছে পছন্দের শীর্ষে। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড নিঃসন্দেহে সেরা গন্তব্য।
বিশেষ করে সীতাকুণ্ডে ঢাকা, ফেনি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এসব জায়গা থেকে খুব সহজেই ডে ট্রিপ দিয়ে ঘুরে আসা যায়। মূলত যাতায়াত সুবিধার জন্যই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সীতাকুণ্ডের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Table of contents [Show]
সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। পুরো চন্দ্রনাথ পাহাড়টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্টগ্রামের বিশেষ আকর্ষণ। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এই পাহাড়ের অবস্থান। ভ্রমণ প্রেমিকরা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে হেঁটে উঠে, পাহাড়ি বেশ কিছু সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয় এবং ভিন্ন এক অনুভূতি পায়।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার পথেই দেখতে পাবেন ছোট ছোট ঝর্ণা৷ এই ঝর্ণার পাশ থেকেই পাহাড়ে ওঠার দুইটি পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাই পাহাড়ে ওঠার জন্য সিঁড়ি করা আর বাম দিকের পথটি সম্পূর্ণ পাহাড়ি। পাহাড়ি পথ দিয়ে ওঠা সহজ এবং সিঁড়ি দিয়ে পাহাড় থেকে নামতে সুবিধা। পাহাড়ের একটু গভীরে গেলেই আপনার চোখে পড়বে জুমক্ষেত এবং ফুলের বাগান। পাহাড়ে মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই ফুলের চাষ করা হয়।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। মন্দিরে থেকে একটু দূরেই রয়েছে ছোট টংয়ের দোকান। দোকানগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা আছে এবং হিন্দুদের পূজা দেওয়ার উপকরণ রয়েছে। তবে পাহাড়ে ওঠার সময় সাথে পর্যাপ্ত পানি ও শুকনো খাবার রাখা উচিত।
পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাতি পাওয়া সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী বিচের সৌন্দর্য অন্যান্য। এটি গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের আশেপাশের মানুষের কাছে ‘'মুরাদপুর বিচ’ নামে বেশ পরিচিত। প্রকৃতি তার সকল সৌন্দর্য যেন গুলিয়াখালী বিচে ঢেলে দিয়েছে। সাগরের জলরাশি একদিকের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণে অন্যদিকে কেওড়া বন অলংকারের মতো ঝলমল করছে। আহা! কি দারুণ প্রকৃতির সাজ।
গুলিয়াখালী সৈকতকে আরো রাঙিয়ে তুলেছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর দেহ ও মনকে দেয় প্রশান্তি। সবুজ ঘাসের মাঠের পাশেই দেখতে পাবেন ছোট ছোট আঁকাবাঁকা নালা। নালাগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই জেগে উঠেছে। জোয়ারের সময় ছোট ছোট নালাগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তখন সবুজ ঘাসের মাঝে নালাগুলো দেখে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন প্রকৃতির মাঝে। সমুদ্র সৈকতে তেমন ঢেউয়ের গর্জন না থাকলেও নিরিবিলি পরিবেশ আপনাকে দিবে ভিন্ন অনুভূতি।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়নের নাম কুমিরা। চট্টগ্রাম থেকে সন্দীপ যাওয়া আসার জন্য এখানেই রয়েছে কুমিরা-সন্দীপ ফেরিঘাট। এই ফেরিঘাটকেই কুমিরা ফেরিঘাট বলা হয়। বর্তমানে ফেরিঘাটে যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য গড়ে উঠেছে প্রায় এক কিলোমিটারের দীর্ঘ জেটি। যা স্থানীয় মানুষদের কাছে কুমিরা ব্রিজ নামে পরিচিত। এই জেটি ব্রিজের একবারে পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানো মাত্রই আপনার মনে হবে আপনি সমুদ্রের মাঝে এসে পড়েছেন। তাছাড়াও তীর থেকে সমুদ্রের অভ্যন্তরে ছুটে চলার অনুভূতি আপনাকে ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ করবে।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে সুউচ্চ পাহাড়গুলো এখান থেকে স্পষ্ট দেখতে পাবেন। সমুদ্রের বুকে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে এতটাই দারুণ লাগে, যা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। কুমিরা ব্রিজ থেকে বিশাল বিশাল জাহাজের সারি আপনার চোখের দৃষ্টিগোচর হবে না। আপনি অবলীলায় সকল সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করতে পারবেন। সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্তে দেখতে পাবেন মাছ ধরা জেলেদের ঘাটে ফেরা।
সমুদ্রের গভীরে গিয়ে কাছ থেকে সুউচ্চ জাহাজগুলো দেখতে চাইলে বোট ভাড়া করতে পারেন। কুমিরা ঘাটে সন্ধ্যা ক্ষণে ইয়ার্ডের সোডিয়াম লাইটগুলো জ্বলে ওঠার পর অপার্থিব এক সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। আর মাসের যে সময়টায় বিকেলে জোয়ার আসে, সে সময়ে কুমিরা ঘাট সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য মেলে ধরে।
নাপিত্তছড়া ট্রেইলের ঝিরি বিশাল বিশাল পাহাড় দিয়ে ঘেরা, মনে হবে কোনো এক গহিন অরণ্যে হারিয়ে গেছেন। এমন বড় আকৃতির পাথর পাহাড়ি অঞ্চলে খুব কমই দেখা যায়। নাপিত্তছড়া ট্রেইলে মোট তিনটি ঝর্ণা আছে। ঝর্ণা তিনটি হলো- মিঠাছড়ি, কুপিকাটাকুম ও বান্দরকুম। ঝর্ণাগুলোতে যাওয়ার ঝিরিপথটাকেই নাপিত্তছড়া ট্রেইল বলে।
নয়দুয়ারি বাজার থেকে ঝিরিপথ বরাবর যাত্রা শুরু করতে হয়। নয়দুয়ারি বাজার থেকে পায়ে ৩০/৪০ মিনিট হাঁটার পরই দেখা মিলবে কুপিকাটাকুম ঝর্ণার। ঝর্ণাটি বেশ সুন্দর এবং নীরব। দেখে মনে হবে ঝর্ণাটির মন খারাপ, এজন্য ঝর্ণাটি অবলীলায় কেঁদে যাচ্ছে। কুপিকাটাকুম ঝর্ণার খুবই কাছেই রয়েছে মিঠাছড়ি ঝর্ণা। মাত্র ২০ মিনিট সময়ে কুপিকাটাকুম ঝর্ণা থেকে মিঠাছড়ি ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। সুউচ্চ এই ঝর্ণাটির আসল সৌন্দর্য বর্ষাকালে বেশি লক্ষ করা যায়।
মিঠাছড়ি ঝর্ণার নিকটেই নাপিত্তছড়া ট্রেইলের তৃতীয় ঝর্ণা বান্দরকুম। ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগে মিঠাছড়ি ঝর্ণা থেকে বান্দরকুম ঝর্ণায় যেতে। এই ঝর্ণার ঝিরিপথটা বেশ সুন্দর। সবমিলিয়ে নাপিত্তছড়া ট্রেইলের নান্দনিক সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন।
বাঁশবাড়িয়া সি বিচ ইতোমধ্যেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই বিচের সৌন্দর্য অন্যরকম। সৈকত থেকে শুরু করে লোহার ব্রিজ চলে গেছে সমুদ্রের মাঝ পর্যন্ত। ব্রিজে দাঁড়িয়ে জোয়ার ভাটার চলাচল আপনাকে বিমোহিত করবে।
খোলামেলা পরিবেশের মাঝে সবুজ ঘাসের চর, তার মাঝে ঝাউ গাছের সারি যেন দর্শনার্থীদের জন্য অধিক আগ্রহে বসে আছে৷ বাঁশবাড়িয়া সি বিচের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে সূর্যাস্ত। প্রচুর পর্যটক শুধু সূর্যাস্ত দেখার জন্যই বাশবাড়িয়া সি বিচে আসে। এই বিচে ভ্রমণ করতে গেলে সন্ধ্যার পরপরই ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। কারণ, পরবর্তীতে ফিরে আসার জন্য সিএনজি না ও পেতে পারেন।
হরিণমারা হাটুভাঙ্গা ট্রেইলের অবস্থান মিরসরাইয়ের কলমদহে। এই ট্রেইলে পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দেওয়ার পরই দেখা মিলে ঝিরি পথের। ট্রেইলটিতে একটি লেক ও তিনটি ঝর্ণা রয়েছে। প্রথমেই দেখতে পাওয়া যায় হরিণমারা ঝর্ণা তারপর কিছুক্ষণ ট্রেক করার পর হাটুভাংগা ঝর্ণার দেখা মিলে। এরপরই হরিণমারা ট্রেইলের সর্বশেষ সর্পপ্রপাত ঝর্ণাটি দেখতে পাওয়া যায়। তিনটি ঝর্ণার নান্দনিক দৃশ্য আপনার মনকে দিবে শীতল এক হাওয়া। মন মানসিকতা খারাপ থাকলে ঘুরে আসতে পারেন হরিণমারা ট্রেইলে। এখানে ভ্রমণের ফলে আপনার মন নিঃসন্দেহে ভালো হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইলের সবচেয়ে দীর্ঘতম ট্রেইল হচ্ছে খৈয়াছড়া ট্রেইল।খৈয়াছড়া ট্রেইলের ১২টি ধাপের প্রতিটি ধাপ থেকেই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে প্রথম ধাপের আকর্ষণীয় ঝর্ণাটি দেখতে হলে আপনাকে প্রায় দুই কিলোমিটারের মতো ঝিরিপথ অতিক্রম করতে হবে। এই ঝর্ণাটির ১২টি ধাপ অতিক্রম করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আপনি ঝর্ণাটি দেখতে গেলে সতর্কতার সাথে ধাপগুলো অতিক্রম করবেন।
সীতাকুণ্ডের মিরসারাইয়ের আরেকটি ট্রেইলের নাম হচ্ছে সোনাইছড়ি ট্রেইল। ট্রেইলটির বিশেষ আকর্ষণ হলো বাদুড়গুহা ও সোনাইছড়ি ঝর্ণা। বাদুড়ের চিৎকার চ্যাচামেচিতে সর্বক্ষণ এই ট্রেইলটি মেতে থাকে। বর্ষাকালে সোনাইছড়ি ট্রেইলে না যাওয়াই ভালো। কারণ, ট্রেইলটির কিছু স্থানে দিনের বেলাতেও অন্ধকার থাকে। ট্রেইলটি বন্য ও ভয়ংকর হলেও এক্সাট্রিম এডভেঞ্চারদের ভালো লাগতে পারে।
ঢাকার সায়দাবাদ থেকে হানিফ পরিবহনে ডিরেক্ট সীতাকুণ্ডে যেতে পারবেন। আর যাদের বাজেট একটু কম তারা স্টার লাইট, এনা ছাড়াও বেশ কিছু বাসে ঢাকা থেকে ফেনী যেতে পারবেন। এরপর ফেনি থেকে সীতাকুণ্ডে যাবেন। আবার আপনি ঢাকা থেকে রেলযোগেও চট্টগ্রামে আসতে পারবেন। আপনার বাজেট যদি খুবই অল্প হয়, তাহলে মেইল ট্রেনে সরাসরি সীতাকুণ্ডে আসতে পারবেন। চট্টগ্রাম সদর থেকে সীতাকুণ্ড কাছেই। তাই আগে চট্টগ্রামে এসে বাসে বা সিএনজিতে অল্প সময়ের মধ্যেই সীতাকুণ্ডে আসতে পারবেন।
সীতাকুন্ডে যে প্রান্তেই ভ্রমণ করতে যান না কেন থাকতে হলে আপনাকে সীতাকুণ্ড বাজারে আসতে হবে। এখানে কম খরচে থাকার জন্য বহু হোটেল পাবেন। এরমধ্যে হোটেল নিউ সৌদিয়া, হোটেল সাইমুন, হোটেল সন্দিপ ও হোটেল জলসার কোয়ালিটি তুলনামূলক ভালো। এসব হোটেলে সিংগেল ও ডাবল রুম রয়েছে। উন্নতমানের হোটেলে থাকতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম সদরে যেতে হবে।
সীতাকুণ্ড খাওয়ার জন্যও বেশ কিছু ভালো হোটেল আছে। হোটেলে খাওয়ার আগে হোটেলের খাবার মানসম্মত কিনা জেনে নিন। অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করুন।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করুন। ভ্রমণকে নিরাপদ করতে প্রয়োজনে টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন। ভ্রমণ স্থানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা করুন। সীতাকুণ্ডে ভ্রমণের সময় স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। পানির ঢেউ বাড়লে বিচের কাছে যাবেন না এবং সাঁতার অজানা থাকলে সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
পাঁচগাঁও, নেত্রকোণা বাংলাদেশের একটি সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম। চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়, ঝর্ণা এবং স্থানীয় ঐতিহ্য একে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে।
বান্দরবানের লামা উপজেলার দর্শনীয় স্থান, ঘোরাঘুরির খরচ, কিভাবে যাবেন এবং থাকার ব্যবস্থাসহ পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ গাইড।
মিরিঞ্জা ভ্যালি, লামা: পাহাড়, মেঘের খেলা, মাতামুহুরী নদীর সৌন্দর্য ও রোমাঞ্চকর রিসোর্ট অভিজ্ঞতা। বিস্তারিত জানুন এখানে।