লামা: প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি
বান্দরবানের লামা উপজেলার দর্শনীয় স্থান, ঘোরাঘুরির খরচ, কিভাবে যাবেন এবং থাকার ব্যবস্থাসহ পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ গাইড।
ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির ‘ষাট গম্বুজ মসজিদ’ নামকরণের ব্যাপারে ইতিহাসে মতবাদ রয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, মসজিদটির ছাদ সমতল এবং গম্বুজ আকৃতির। এর থেকে ‘ছাদগম্ভুজ’ নাম হয়, পরে তা কথ্যরূপে ‘ষাটগম্বুজ’ নামে পরিচিতি পায়।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে একটি ষাট গম্বুজ মসজিদ। এটি খুলনা বিভাগের বাঘেরহাট জেলায় অবস্থিত। সাধারণত এ মসজিদটি ষাট গম্বুজ নামে পরিচিত। সুলতানি আমলের বৃহত্তম মসজিদটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। স্থাপত্যশৈলী ও সৌন্দর্যের কারণে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে ঐতিহাসিক এই মসজিদ। প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে বাঘেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ পর্যটকে মুখরিত থাকে বছরের বারো মাস।
মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি না থাকায়, ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখে ধারণা করা হয়, ১৫০০ শতাব্দীতে খানজাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন।
ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির ‘ষাট গম্বুজ মসজিদ’ নামকরণের ব্যাপারে ইতিহাসে মতবাদ রয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, মসজিদটির ছাদ সমতল এবং গম্বুজ আকৃতির। এর থেকে ‘ছাদগম্ভুজ’ নাম হয়, পরে তা কথ্যরূপে ‘ষাটগম্বুজ’ নামে পরিচিতি পায়। আবার কিছু ঐতিহাসিকের মতে, মসজিদটির ছয়টি সারিতে দশটি করে মোট ষাটটি পাথরের খাম্বার উপর নির্মাণ করা হয়েছে বলে ষাট গম্বুজ মসজিদ নামকরণ হয়। তবে নাম যাইহোক মসজিদটির সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে।
Table of contents [Show]
মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীন নিদর্শন ষাট গম্বুজ মসজিদের বাহিরে উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্থ ১০৪ ফুট। আর ভিতরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে ১৪৩ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৮ ফুট প্রশস্ত। বৃহত্তম মসজিদটির দেয়ালগুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু। এর পূর্বে দিকে ১১ টি বিরাট খিলানযুক্ত দরজা আছে। তবে মসজিদটির অন্য দরজাগুলোর চেয়ে মাঝের দরজাটি সবচেয়ে বড়। আর মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ৭ টি করে মোট ১৪ টি দরজা এবং চারকোণে চারটি গোলাকার মিনার আছে। প্রতিটি মিনারের চূড়ায় একটি করে গোলাকার গম্ভুজ রয়েছে। ছাদের কার্নিশের তুলনায় মিনারগুলোর উচ্চতা একটু বেশি।
মসজিদের সামনের দুটি মিনারের একটির নাম রওশন কোঠা এবং আরেকটির নাম আন্ধার কোঠা। মিনারগুলোর ভিতরে রয়েছে প্যাঁচানো সিঁড়ি, যা দেখতে চমৎকার। প্রাচীনকালে এই মিনার থেকে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আকর্ষণীয় মসজিদটির অভ্যন্তরে মোট ষাটটি পিলার আছে। পিলারগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ৬টি সারিতে মোট ১০টি করে বিন্যস্ত। প্রতিটি পিলার বা স্তম্ভ পাথরের তৈরি কিন্তু ৫টি পিলার ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। স্তম্ভগুলোর চারপাশে ছাদের উপর নির্মাণ করা হয়েছে গম্বুজগুলো। পুরো মসজিদের ১১টি সারিতে সর্বমোট ৭৭টি গম্ভুজ রয়েছে। আর মিনারের উপর চারটি গম্ভুজ সহ ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা ৮১টি।
মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে মিহরাবের সংখ্যা দশটি। এরমধ্যে মাঝখানের মিহরাবটি বড় এবং কারুকার্যপূর্ণ। উত্তরদিকে ৪টি ও দক্ষিণ দিকে ৫টি মিহরাব রয়েছে। জনশ্রুতি আছে যে, মসজিদ নির্মাণের পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণের সৌন্দর্য পর্যটকদের বিশেষ করে আকর্ষণ করে৷ তাছাড়াও পুরো বাঘেরহাট শহরটি বিভিন্ন নকশার আদলে তৈরি করা মসজিদ দ্বারা সজ্জিত। নিচে মসজিদ প্রাঙ্গণের ঘোড়া দিঘি এবং জাদুঘর সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
বাঘেরহাট জেলায় প্রচুর দিঘি রয়েছে, এরমধ্যে ঘোড়া দিঘি অন্যতম। এটি একটি বিশাল জলাশয়। জানা যায়, খানজাহান আলী এই অঞ্চলটি জয় করে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। সেসময় এখানে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়, ফলে খানজাহান আলী এই বিশাল পানির ট্যাঙ্কটি খনন করেন। সেই থেকে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘোড়া দিঘি ট্যাঙ্কটি পানীয় জলের নিখরচায় উৎস হয়ে ওঠে।
অনেকের মতে, খান জাহান গোড়ায় চড়ে ট্যাঙ্কটি মাপেন। এরপর থেকে ট্যাঙ্কটির নাম হয়ে যায় ঘোড়া দিঘি। আবার অন্য সূত্রে জানা যায়, এখানে ঘোড়ার প্রতিযোগিতা হত এবং বেশ কিছু ঘোড়া এই ট্যাঙ্কটির তীরে বাধা ছিল। তারপর থেকে ট্যাঙ্কটি ঘোড়া দিঘি নামে পরিচিতি পায়। বাঘেরহাটের এই জলাশয়টি ষাট গম্বুজ মসজিদের পশ্চিমপাশে অবস্থিত।
মুসলিম সংস্কৃতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণের জন্য ১৯৯৫ সালে ইউনস্কোর তহবিলের সাহায্য জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরটি বাঘেরহাটের প্রাচীন সব নিদর্শন প্রদর্শন করে। বহু মানুষ প্রাচীনকালের বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখতে দূর দুরন্ত থেকে জাদুঘরটিতে ছুটে আসে। প্রাচীন নিদর্শন দেখতেও পর্যটকের মনেও ব্যাপক আগ্রহ জাগে। জাদুঘরটিতে মোট তিনটি গ্যালারি রয়েছে, যেখানে বহু কালীন ইসলামি সংস্কৃতি এবং প্রাচীনকালের অনেক ফলক প্রদর্শন করা।
জাদুঘরটি ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। সুলতানি আমল বুঝতে চাইলে, চলে যান জাদুঘরটিতে।
সড়কপথে ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে খুব সহজেই ষাট গম্বুজ মসজিদে যেতে পারবেন। আপনি চাইলে নৌপথেও করেও যেতে পারবেন। তবে সড়কপথে দ্রুত যাওয়া যায়। ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সকাল সন্ধ্যা বাঘেরহাটের উদ্দেশ্য ফাল্গুনী, বনফূল, মেঘনা, হানিফ ও ঈগলসহ বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। এই বাসগুলোতে ঢাকা থেকে বাঘেরহাট যেতে ৬৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে এবং প্রায় ৮ ঘণ্টার মত সময় লাগবে। বাঘেরহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩০/৪০ টাকায় রিকশায় করে ষাট গম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়।
তাছাড়াও ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন খুলনা এক্সপ্রেসে সরাসরি খুলনা এসে, সেখান থেকে সিএনজিতে ষাট গম্বুজ মসজিদে যেতে পারবেন। খুলনা থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টায় প্রাচীন মসজিদটিতে যাওয়া যায়। আর আপনি একটু আরাম আয়েশে যেতে চাইলে নৌপথে ভ্রমণ করতে পারেন।
ষাট গম্বুজ মসজিদ রবিবার পূর্ণ দিন বন্ধ থাকে এবং সোমবার দুপুর ২.০০ টায় খোলা হয়। তাছাড়া গরমকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য ১২.৩০ থেকে ৩.৩০ পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ থাকে। তবে প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ রাখা হয়।
ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের টিকিট মূল্য ২০ টাকা। আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য টিকিট মূল্য ২০০ টাকা এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের প্রবেশ ফ্রি।
বাঘেরহাটে ভ্রমণ করতে গিয়ে থাকার ক্ষেত্রে একটু অসুবিধায় পড়তে পারেন। কারণ, বাঘেরহাটে থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই৷ তবে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে৷ রেল রোড়ে রয়েছে মমতাজ হোটেল কিন্তু সুযোগ সুবিধা কম। তাছাড়াও মমতাজ হোটেলের আশেপাশে মাঝারি মানের অল্পসংখ্যক হোটেল রয়েছে। আপনি চাইলে সেই হোটেল গুলোতেও থাকতে পারবেন। আবার খুলনা গিয়েও ভালো মানের হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
ষাট গম্বুজ মসজিদের আশেপাশে খাবারের জন্য ভালো মানের কিছু হোটেল আছে। তাছাড়াও বাঘেরহটের বিখ্যাত কিছু খাবার তো থাকছেই। সব মিলিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে বেশি কষ্ট হবে না। তারপরও খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে আগে জেনে নিবেন। আর অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করবেন।
সুলতানি আমলের ষাট গম্বুজ মসজিদ একটি প্রাচীন নিদর্শন। মসজিদটির কারুকার্য এককথায় অসাধারণ। সুন্দর কারুকার্য ও মনোরম পরিবেশের কারণে মসজিদটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। তাইতো মসজিদটির নিকটে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। ষাট গম্বুজ ছাড়াও বাঘেরহাটে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। যেগুলো দেখেও পর্যটকের মনে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। নিচে ষাট গম্বুজ মসজিদের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
খান জাহান আলির মাজার:বাঘেরহাটে খাঞ্জেলি দিঘির উত্তর পাড়ে খান জাহান আলির সমাধিসৌধ। সুন্দর এই সমাধি সৌধটি বর্গাকৃতির। সমাধি সৌধের উঁচু ২৫ ফুট এবং এর ছাদে একটি গম্ভুজ আছে। সমাধি সৌধের ভিতরে একটি পাথরের বেদিতে খান জাহান আলির মাজার অবস্থিত। প্রতি বছর ২৫ অগ্রহায়ণ খান জাহান আলির মাজার প্রাঙ্গণ বার্ষিক ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়।
নয় গম্ভুজ মসজিদ:বাঘেরহাটের ঠাকুরদীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত নয় গম্ভুজ মসজিদ। এটি ১৫ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়েছিল। নয় গম্বুজ মসজিদের কাছেই খান জাহান আলির মাজার। তাই এই মসজিদ থেকে খুব সহজেই খান জাহান আলির মাজারে ঘুরে আসা যায়। মসজিদটির চার কোণায় মিনার ও পুরো মসজিদটি পোড়ামাটির কারুকাজ খচিত। এই মসজিদটির কারুকার্য দেখেও আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন। তাই ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখতে গেলে, নয় গম্ভুজ মসজিদ দেখতে মিস করবেন না।
সিংগাইর মসজিদ:ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রায় ৩০০ গজ দক্ষিণ পূর্ব দিকে সিংগাইর মসজিদ অবস্থিত। মসজিদটিতে একটিমাত্র গম্বুজ বিদ্যমান। প্রাচীন এই মসজিদের বাইরের দিকে ৩৯ ফুট এবং ভিতরের দিকে ২৫ ফুট লম্বা। আর মসজিদটির প্রাচীর গুলোর প্রশস্ত প্রায় সাত ফুট। মসজিদটির নির্মাণকাল আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। এক গম্ভুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের কারুকার্য অসাধারণ।
পুরো বাঘেরহাট জেলাটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ দিয়ে ঘেরা। প্রাচীন মসজিদগুলো দেখতেও পর্যটকের মনে ব্যাপক আগ্রহ। ষাট গম্বুজ মসজিদসহ বাঘেরহাটে রয়েছে প্রাচীন বহু মসজিদ। সুলতানি আমলের ঐতিহাসিক মসজিদ দেখতে চাইলে ছুটে যান বাঘেরহাটে। আর দেখতে থাকুন প্রাচীন নিদর্শন। তবে যেকোনো জায়গায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। নিজের যত্ন নিন এবং সর্বদা ভালো থাকুন।
বান্দরবানের লামা উপজেলার দর্শনীয় স্থান, ঘোরাঘুরির খরচ, কিভাবে যাবেন এবং থাকার ব্যবস্থাসহ পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ গাইড।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক, লালদিঘি। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত, এই স্থানটি চট্টগ্রামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক জীবনের অমূল্য অংশ। লালদিঘির ইতিহাস, কিংবদন্তি এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানুন।
ঢাকার পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত আর্মেনিয়ান চার্চ একটি ঐতিহাসিক গির্জা যা ১৭৮১ সালে নির্মিত। এর সাথে যুক্ত রয়েছে আর্মেনীয় ব্যবসায়ীদের বসবাস ও তাদের সাংস্কৃতিক অবদান।